খন্দকার রবিউল ইসলাম: রাজবাড়ীর মিজানপুর ইউনিয়নের মাইছা ঘাটা এলাকার ৬নং ওয়ার্ডে একটি বাল্যবিবাহ হতে যাচ্ছে এমন একটি খবর চাই। খবরটি পাওয়া মাত্রই রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলামের সাথে আলাপ করে নিজেই গেলাম মেয়ের বাড়িতে। গিয়ে দেখি বাড়িটিতে কেউ নেই। ভাবলাম হয়তো কেউ মিথ্যা খবর দিয়েছে।
এমন সময় পেয়ে গেলাম দুই ছোট ভাইকে। তাদের কাছে জানতে চেয়েই পেলাম বিয়ে বাড়ির ঠিকানা। গোপনে বিয়ে দিতে, মেয়ের চাচার বাড়িতে নিয়ে বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছে।
একদিকে অন্ধকার রাত, অন্যদিকে নদীর কূল দিয়ে যেতে হবে দূরে। কি আর করা, রওনা দদিলাম। যদি একটি মেয়ের জীবন রক্ষা করা যায়।
যাওয়ার পথে একটু ভয়ও লাগছিলো, কারন নদীর কূলে নিরব এলাকা। মেয়ের চাচার বাড়িতে গিয়ে দেখলাম সত্যি একটি বাল্যবিবাহের আয়োজনে ব্যস্ত মেয়েটির পরিবারের লোকজন। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েটিকে বিয়ে করতে হাজির পাত্রসহ বরযাত্রীরাও।
সাংবাদিককে দেখে কিছু লোকের প্রশ্ন, ‘কে খবর দিয়েছে আপনাকে?’ একের পর এক ফোন আসতে লাগলো। ভাই আমি ওমুক। আমিও পরিচয় দিলাম। পরিচয় পেয়ে ফোনের ওপর পাশ থেকে সুন্দর ভাষায় বললেন , ‘ভাই দেখেন গরীব মানুষের মেয়ে, বিয়েটা দিয়ে দেওয়া যায় কিনা।’
বলাম অবশ্যই হবে যদি মেয়ের ১৮বছর হয় তা হলে, নয়তো বিয়ে হবে না।
কিছু সময় পরে আসলেন ৬নং ওয়াডের মেম্বার কোরবান মন্ডলের ফোন। তিনিও একি কথা বললেন। তাকেও বললাম আপনি যদি বলেন যে ১৮ বছর হয়ে গেছে ঠিক আছে। আপনি এসে বসে থেকে বিয়ে দিয়ে যান সমস্যা নেই। মেম্বার সাহেব কোন উত্তর দিতে পারলেন না।
কিছু সময় পরে আবার সাবেক মেম্বার জোসন তিনিও ফোন করলেন। অবশ্য তিনি বললেন, ‘আপনি যা বলবেন তাই হবে বিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
আবার কিছু সময় পরে ফোনে সাংবাদিক পরিচয়ে একজন বললেন, ‘ভাই ভালো আছেন আমি…জি ভাই বলেন। তিনি বললেন, ‘কোরবান মেম্বারের সাথে কথা হয়েছে তিনি বলছেন সকালে আপনার আর আমার জন্য ব্যবস্থা করবে আপনি চলে আসেন।’
আমি তাকে উত্তরে বললাম ভাই আমি ব্যবস্থার মধ্যে নেই, এধরনের কথা আমাকে বলবেন না। তিনি আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলেন।
আমি জানি ভালো কাজে অনেক বাধা আসবে এটা নতুন কিছু নয় তবুও সেটা মেনেই সাংবাতিকতা করছি। নিজেকে একজন সৎ সাংবাদিক হিসাবে প্রতিষ্ঠত করার চেষ্টা করছি মাত্র।
শেষপর্যন্ত মেয়েটির চাচা বন্ধ রাখলেন বেআইনি ও মেয়েটির জীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বাল্যবিবাহ।
লেখক: সাংবাদিক।