মিরাজ হোসেন গাজী : র্যাব। এই বাহিনীটি গঠন করা হয়েছিলো, পুলিশ যেখানে শেষ, র্যাব সেখান থেকে শুরু। প্রতিষ্ঠার পর থেকে তার প্রমাণও দিয়েছে বিহিনীটি। সেই জঙ্গি নেতা বাংলাভাই থেকে শুরু করে আজকের কথিত আইএস(নব্য জেএমবি)জঙ্গি দমনে এই এলিট ফোর্সের ভূমিকা সব সময়ই প্রশংসিত। বিশেষ করে অপহরণের মতো ঘটনা উদ্ধারে র্যাবই বেশি সফলতা দেখিয়েছে সারা দেশে।
“রাজবাড়ী থেকে ‘অপহৃত’ কিশোরী ফরিদপুরে উদ্ধার, গ্রেফতার ১” অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘রাজবাড়ী টুডে’র এই খবরটি পড়ে র্যাবের সফলতা আরেকবার সামনে চলে আসে। রাজবাড়ী সদর থানায় এক বাবার মামলার সূত্র ধরে র্যাব সদস্যরা উদ্ধার করে মেয়েটিকে। আটক করে কথিত অপহরণকারীকে ( কলেজ ছাত্রা রয়হান হিরা)। একটি মামলায় পুলিশের অপারগতা বা সীমাবদ্ধতায় দায়িত্ব নেয় র্যাব। এমনটিই আশা করে সাধারণ মানুষ। সেই হিসেবে এই ঘটনায়ও মেয়েটি নিখোঁজের ২১ দিন পর ফরিদপুর থেকে ছেলেটিকে আটক করা হয়। এবং ফরিদপুর বায়তুল আনাম এলাকার একটি বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় মেয়েটিকে। র্যাব গণমাধ্যমকে এমন তথ্যই জানায় । যা প্রচার ও প্রকাশ হয় জেলা ও জাতীয় পর্যায়ের অনেক গণমাধ্যমে। এর ফলে এক বাবার বুকে ফিরে এলো মেয়েটি। স্বস্তি ফিরে এসেছে পুরো পরিবারে। আটক হলো ‘অপহরণকারী’। কিন্তু এই অপহরণকারীও তো কারো সন্তান। সেই বাবা মায়ের কথা কি কেউ চিন্তা করেছি। র্যাব যেমনি মামলার সূত্র ধরে এই অভিযান চালিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে, তেমনি র্যাবের বক্তব্য প্রচার করে গণমাধ্যম। দুটিই স্বাভাবিক ঘটণা।
অপহরণ মামলায় ভিকটিমকে উদ্ধারের পর আটক ছেলেটি আইনের দৃষ্টিতে অপহরণকারীই। কিন্তু অস্বাভাবিক হলো, ঐ ছেলেটির পরিবারের বর্তমান পরিস্থিতি। তাদের ছেলে এখন আইনের কাছে , সমাজের কাছে অপরাধী।
নিউজটি দেখার পর কয়েকটি প্রশ্ন দেখা দেয়। আর তাই খোঁজ নিতে শুরু করি পরিচিতজনদের কাছে। পাওয়া যায়, যা ভেবেছিলাম সেই তথ্যই। এই ছেলে ও মেয়েটির মধ্যে দীর্ঘ্য দিন সম্পর্ক ছিলো। ভালোবাসার সম্পর্ক। আর সেই টানেই তারা দুজন স্বেচ্ছায় ঘর থেকে বের হয়। এবং ফরিদপুরে ২১ দিনের মতো সংসার করে। এর পিছনে যুক্তিও স্পষ্ট। (০১) মেয়েটিকে কোন নির্জন স্থানে আটকে রাখা হয়নি। (০২) তাকে বেধে রাখাও হয়নি। (০৩) ছেলেটিও স্বাভাবিকভাবেই ফরিদপুর শহরে চলাফেরা করেছে। (০৪) মেয়েটি যেই বাসায় ছিলো সেখানের কেউ অভিযোগও করেনি যে মেয়েটিকে আটকে রাখা হয়েছে। (০৫) এই ২১ দিনে একবারও মেয়েটির চিৎকার শুনে নাই কেউই।
মামলার তথ্য মতে, ১০ মে তারা নিখোঁজ হয়। ছেলেটির পরিবাবের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১১ মে ফরিদপুরে বিয়ে করে তারা। সেই কাগজপত্রের কপিও দেখায় তারা। শুধু তাই নয়, এর আগে এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশের পর মেয়েটি ছেলের বাড়ীতে চলে আসে। তখন মেয়েটিকে তার বাবাকে ডেকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর পর মেয়েটিকে তার বাবা নানা বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারিতে নিয়ে গিয়ে বিয়েও দেয়।
কিন্তু মেয়েটি তার ভালোবাসা ভুলতে পারে না। বিয়ের কদিনপর পর স্বামীসহ রাজবাড়ীতে বেড়াতে আসে। স্বামীকে মিষ্টি কিনতে পাঠিয়ে নিজে চম্পট দেয় তার ভালোবাসার মানুষটির (রায়হান হিরা) সাথে।
শুধু তাই নয়, ছেলেটির একাধিক বন্ধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন নানা কথা, যাতে প্রমাণ হয় তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো। কথা হয় মেয়েটির এক ছেলে বন্ধুর সাথেও। যে এই মেয়েটির মুখেই শুনেছে ছেলেটির সাথে তার ভালোবাসার সম্পর্কের কথা।
এখন হয়তো পরিবারের চাপে বা অনুরোধে মেয়েটি বলবে সে অপহৃত হয়েছিল। ছেলেটিকে চিনে না। এমন উদাহরণও কম নয়। তবে, সত্যিই ওদের মধ্যে সম্পর্ক থেকে থাকে, তাহলে মেয়েটির বাবা এখন যা করছেন তা মোটেও সঠিক হচ্ছে না। কারন সবাই জেনে গেছে এরা দুজন ২১ দিন একসাথে ছিলো। বিয়েও করে ফেলেছে। তাহলে কেন ওদের ভালোবাসা মেনে না নিয়ে পরিস্থিতি ভিন্ন করা হচ্ছে। আমাদের সমাজ বাস্তবতায় এই মেয়েটির জন্য সামনের দিনগুলি মোটেও স্বস্তির হবে না। ছেলেটির এবার রাজবাড়ী সরকারি টেকনিক্যাল কলেজে ৩য় বর্ষে পড়ছে। চলছে পরীক্ষা। ওর ভবিষ্যাৎটাও ভাবতে হবে।
আর যদি সব যুক্তি ও সবার কথা মিথ্যে হয়। সত্যিই যদি ছেলেটি জোর করে মেয়েটিকে ২১ দিন ধরে আটকে রেখে নির্যাতন করে থাকে, তাহলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়ার পক্ষে পুরো দেশবাসী। (ছবি: মেয়েটির বন্ধুর ফেসবুক থেকে নেয়া)
লেখক: টিভি রিপোর্টার, বাংলাভিশন,ঢাকা। (অনুসন্ধানী রিপোর্টার)