রাজবাড়ী টুডে ডেস্ক: ১৯৮১ সালের ৩০শে মে শুক্রবার ভোররাত। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির রাত।
সন্ধ্যে থেকেই চট্টগ্রাম বিএনপির অন্ত:কোন্দল মেটাতে নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করে সার্কিট হাউজে রাত যাপন করছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী পত্রিকার তখনকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন হেলাল উদ্দিন চৌধুরী। তিনি জানান, ফজরের আজানের কিছু আগেই প্রচণ্ড গুলির আওয়াজ শুনতে পান তারা।
সকাল হওয়ার আগেই তিনি আরেকজন সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে সার্কিট হাউজের দিকে রওয়ানা দেন। তবে সার্কিট হাউজের প্রধান ফটকে দেখতে পান প্রচুর সেনা সদস্য। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য তারা বেশ কিছুটা দূরে অপেক্ষা করছিলেন।
সে দিনের কথা স্মরণ করে মি. চৌধুরী বলেন, “কিছুক্ষণ পর যখন সার্কিট হাউজে প্রবেশের চেষ্টা করলাম তখন আর্মির একটা গ্রুপ আসলো, এসে আমাদেরকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো। এর মধ্যেই আমরা জেনে গেছি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সহ তাঁর বিশ্বস্ত বেশ কিছু সেনা সদস্য বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হয়েছেন”।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরীর বই ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য: স্বাধীনতার প্রথম দশক’-এ লিখেছিলেন যে তিনি যখন থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন, তখন মেজর খালেদ পলাতক অবস্থায় ব্যাংককে যান এবং আরেকজন সেনা কর্মকর্তা মেজর মুজাফফর ভারত থেকে ব্যাংককে আসেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে জেনারেল চৌধুরী জিয়া হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাদের কাছে।

বইতে লেখা হয়েছে, “ভোর ৪টার দিকে অফিসাররা অতর্কিতে সার্কিট হাউসে আক্রমণ করে। জুনিয়ার অফিসাররা নিজেরাই দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রথমে সার্কিট হাউসে রকেট ল্যাঞ্চার নিক্ষেপ করে। পরে এক গ্রুপ গুলি করতে করতে ঝড়ের বেগে সার্কিট হাউসে ঢুকে পড়ে। গুলির শব্দ শুনে জিয়া রুম থেকে বের হয়ে আসেন এবং কয়েকজন অফিসার তাঁকে ঘিরে দাড়ায়। ওই সময় লে. কর্নেল মতিউর রহমান মাতাল অবস্থায় টলতে টলতে ‘জিয়া কোথায়. জিয়া কোথায়’ বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে আসে এবং পলকেই গজ-খানেক সামনে থেকে তার চাইনিজ স্টেনগানের এক ম্যাগাজিন (২৮টি) গুলি জিয়ার উপর চালিয়ে দেন। অন্তত ২০টি বুলেট জিয়ার শরীরে বিদ্ধ হয় এবং পুরো শরীর ঝাঁঝরা হয়ে যায়”।
খবর: বিবিসি বাংলা।