ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
রামকান্তুপুর ইউয়িনের মোহনশাহ’র বটতলার গোল চত্বর এর উদ্বোধন রাজবাড়ীতে মাদকদ্রব্যর অপব্যবহার ও পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস ও আলোচনা সভা রাজবাড়ীতে ডিবি পুলিশের অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী মোজাম্মেল আটক রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প (ফেইজ-২) বাস্তবায়ন বিষয়ক সাধারণ সমন্বয় সভা সন্ধ্যার মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে হবে-প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী রামকান্তপুর ইউনিয়ন ও পৌর নবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সোহেল রানা। ঈদুল ফিতর’ উপলক্ষে চন্দনী ইউনিয়বাসীর সুস্বাস্থ্য, সুখ-সমৃদ্ধি ও অনাবিল আনন্দ কামনা করে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন-শাহিনুর পৌরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন যুবলীগ নেতা মীর সজল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষকেঈদের শুভেচ্ছা কাজী ইরাদত আলীর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ

রাজধানীর মিরপুরের স্কুল ছাত্রী শান্তা অপহরণ ও পাচার মামলার মূল আসামী দূর্ধর্ষ মুন্নাকে ধরতে মরিয়া পুলিশ

রাজু আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক, রাজবাড়ী টুডে:

রাজধানীর মিরপুরের ৭ম শ্রেনীর স্কুল ছাত্রী শান্তা (১৪) অপহরন ও পাচার মামলার মূল আসামী দূধর্ষ মুন্না (২২) এখনো অধরা। চাঞ্চল্যকর এই মামলার ভুক্তভোগী উদ্ধারকৃত অসহায় শান্তার হতদরিদ্র পরিবার বিচারের আশায় স্থানীয় প্রশাসন সহ প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে আজও চোখের পানি ফেলছে।

চলতি বছরের গত ১৭ই জুন মিরপুরের শাহ আলী থানার অন্তর্গত উত্তর বিশিল এলাকার রেডিয়েন্ট মডেল হাইয়ার সেকেন্ডারী স্কুল থেকে নিখোঁজ হয় শান্তা। শুরু হয় ভুক্তভোগী অসহায় পরিবারের খোঁজা খুজি। শান্তার পরিবারের অসহায় মা ও ভাইয়েরা পাগলের মত খুঁজতে থাকে শান্তাকে।

স্থানীয় প্রভাবশালী মহলে বুকফাটা কাঁন্নার জল নিয়ে মেয়েকে ফিরে পেতে ধরনা ধরে কোন প্রতিকার না পেয়ে শাহ আলী থানা পুলিশের সহযোগীতা নেন। চিহ্নিত সন্দেহ ভাজন হিসেবে ১) মুন্না (২২) পিতাঃ মোঃ ইউসুফ আলী, ২) মোছাঃ জেসমিন (২৮) স্বামীঃ ফোরকান, ৩) মোছাঃ মুকছানা আক্তার (১৯) পিতাঃ ইউসুফ আলী, সর্ব সাং- বিজলী মহল্লা বালুর মাঠের কোনার বস্তি এলাকা, থানাঃ মোহাম্মদপুর, ঢাকা, ৪) মোঃ সাদ্দাম হোসেন (২২) পিতা মৃত বেলায়েত হোসেন, সাং- দুদাল, থানাঃ বাকেরগঞ্জ, জেলাঃ বরিশাল, ৫) নেকবার হোসেন, (অজ্ঞাত) এই পাঁচ জনকে আসামী করে অপহরনকৃত শান্তার বড় ভাই রিয়াজ বাদী হয়ে শাহ আলী থানায় একটি অপহরন মামলা দায়ের করেন। শাহ আলী থানার মামলা নং-১০। পুলিশের ব্যাপক তৎপরতায় বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক শান্তা অপহরন ও পাচারের মূল কাহিনী।

শাহ আলী থানা পুলিশ ও শান্তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শান্তাকে দেশের একটি চিহ্নিত নারী অপহরন ও পাচারকারী চক্র মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পার্শবর্তী দেশ ভারতে পাচার ও বিক্রি করে দিয়েছে। অপহরনকৃত শান্তার মায়ের আকাশ-বাতাস কাপানো কান্না ও ছোটাছুটির এক পর্যায়ে শান্তার মায়ের পূর্ব পরিচিত আকবর নামের এক ব্যাক্তি সহযোগীতার হাত বারিয়ে দেন।

এ বিষয়ে শান্তার অসহায় মা বলেন বেশ কয়েক বছর পূর্বে মিরপুরের গুদারাঘাট এলাকায় একই বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকা কালীন আকবরের সাথে পরিচয় ও পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠে এরই ফলসূতিতে জানতে পারি আকবর এর আত্বীয় স্বজন ভারতে থাকেন তাদের সহযোগীতা নিলে আমার মেয়েকে উদ্ধার করা গেলেও যেতে পারে। আমার বুকে আশার সঞ্চার হলে শান্তাকে উদ্ধারব্যয় হিসেবে আকবরের দাবীকৃত ১,৫০,০০০/- টাকা দিতে রাজি হয়ে যাই বুকের মানিক মেয়েটিকে উদ্ধারের আশায়। আমি অতিস্বত্তর বরগুনা জেলার বেতাগী থানার গ্রামের বাড়ি জমি বিক্রয় করে আকবরকে ( দেড় লক্ষ) টাকা দিলে শাহ আলী থানা পুলিশের সহযোগীতায় আমার মেয়েকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।

স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমার একটাই প্রানের দাবি-অপরাধীদের শাস্তির শেষ পরিনতি দেখে বুকের হাহাকার দূর করতে চাই। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হলে ভবিষ্যতে এই ধরনের এমন কোন নিকৃষ্ট ও দূর্ধষ নারী পাচারকারী চক্র আমার মতো কোন অসহায় মায়ের বুক খালি করে এমন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড ঘটাতে পারবে না।

এই ঘৃনিত ও চাঞ্চল্যকর মামলার ভূক্তভোগী উদ্ধারকৃত শান্তা (১৪) কান্না বিজরিত কন্ঠে তার ভারতে অবস্থানকালীন দুঃস্বপ্ন ও তার উপর ভয়ানক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলে-

আমি গত ১৭ই জুন বেলা ১২.০০ দিকে মিরপুর-১ নম্বরের রেডিয়েন্ট মডেল হায়ার সেকেন্ডারী স্কুলে কোচিং করার জন্য পৌছলে আমার সহপাঠী মামলার চার নং আসামী সাদ্দামের সাথে দেখা হয়। সাদ্দামের সাথে আরও একটি মেয়ে ছিল। সাদ্দাম আমাকে বলে শান্তা তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে। চল হাটতে হাটতে বলি। আমি সাদ্দামের সাথে হাটতে হাটতে স্কুল থেকে সামান্য দূরে পৌছালে সাদ্দাম তার ব্যাগ থেকে একটি কোকাকোলার বোতল বের করে আমাকে খেতে দিলে আমি তা নির্দ্বিধায় পান করি। কোমল পানীয় পান করার কিছুক্ষন পরপরই আমি অনুভব করি আমার মাথা বনবন করে ঘুরছে এবং চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে ইতি মধ্যে সেখানে একটি মইক্রোবাস পৌছলে সাদ্দাম ও সঙ্গীয় অজ্ঞাত পরিচয়ের মেয়েটি ধরাধরি করে আমাকে গাড়ীর ভিতর তুলে নেয় এবং আমি অচেতন হয়ে পড়ি। জ্ঞান ফেরার পর আমি দেখতে পাই একটি রুমের ভেতর শুয়ে আছি। আমার পাশে বসে একটি ছেলে ও দুটি মেয়ে আলাপচারিতায় ব্যস্ত। তাদের আলাপচারিতার এক পর্যায়ে শুনতে পাই আমি ভারতের সুরাত এলাকায় আছি ছেলেটির নাম মুন্না ও মেয়ে দুটির নাম যথাক্রমে জেসমিন ও মুকছানা। আমি আতংকে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করি আপনারা কারা? আমি কোথায়? তখন মামলার এক নং আসামী মুন্না আমাকে বেধরক মারপিট করতে করতে বলে… তুই এখন ভারতে আছিস। এটা বাংলাদেশ নয়। এখানে যাদের দেখতে পাচ্ছিস তারা যা বলে এখন থেকে তুই তাই শুনবি। না হলে কোনদিনই বাংলাদেশে মায়ের কোলে ফিরে যেতে পারবিনা। তারা প্রায় দুই মাস একই রুমে আটকে রেখে আমাকে অবর্ণনীয় নির্যাতন করে। কিছুদিন পর তারা আমাকে চাপের মুখে অন্য এলাকার একটি বিউটি পার্লারে নিয়ে যায়। পার্লারের ভিতরে থাকা একটি রুমে আমাকে বন্দি করে রাখে। সেখানে একজন মহিলা ২৪ ঘন্টা আমাকে পাহাড়া দিয়ে রাখে। কয়েকদিন পার হলে মুন্না, জেসমিন, মুকছানাসহ আকাশ নামের অচেনা একটি যুবক আসে। তখন আমি কাঁদতে কাঁদতে তাদের পায়ে লুটিয়ে পড়ি এবং আমাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করি। কিন্তু তারা আমার এই আর্তনাদের কোন তোয়াক্কা না করে নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে আকাশ মুন্নাকে দুই লক্ষ ষাট হাজার টাকা দিয়ে বলে এর বেশি দিতে পরবো না। তাদের লেনদেনে দেখে ও আলাপচারিতা শুনে বুঝতে পারি আমি দুই লক্ষ ষাট হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে গেছি এবং অঝোরে কাঁদতে থাকি ইতি মধ্যে ওরা আমাকে একা রুমে রেখে বাইরে চলে গেলে আমি তাৎক্ষনিক দেখতে পাই ওদের কেউ একজন ভুল করে তাদের ব্যবহারকৃত একটি মোবাইল ফোন ফেলে চলে গেছে আমি এক বিন্দু সময় নষ্ট না করে আমার মায়ের মোবাইল নাম্বারে ফোন করে বিস্তারিত খুলে বলি কিছুক্ষন পর ঐ মোবাইলে একটি কল আসলে আমি ভয়ে ভয়ে রিসিভ করলে অন্য প্রান্ত থেকে একজন বললো- তুমি কি শান্তা আমি যা বলি মন দিয়ে শোন। তোমার মা বাংলাদেশ থেকে আমাকে এই নম্বরটি দিয়েছে। তুমি চিন্তা করোনা আমি তোমাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। তোমার অবস্থানের ঠিকানা আমাকে বল ও আমার এই নম্বরটি সংগ্রহ করে রাখ। আমি আমার অবস্থানের ঠিকানা বলতে না পারায় তিনি আমাকে সাহস দিয়ে বললেন যে কোন উপায়ে তুমি ঠিকানাটির সম্পর্কে জেনে আমার এই নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে। আমি দ্রুততার সাথে মোবাইল ফোন নাম্বারটি মুখস্থ করে ফেলি। হঠাৎ হুড়মুড় করে মুন্না ঘরে প্রবেশ করে মোবাইলটি আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে মোবাইলের কল রেজিষ্টার চেক করে অন্যত্র আমি কথা বলেছি নিশ্চিত হয়ে বেধরক মারপিট শুরু করে। জোর পূর্বক অবস্থান পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে আমাকে নিয়ে বাইরে বের হলে কিছুদূর যাওয়ার পর লোকজন দেখে আমি চিৎকার চেঁচামেচি করতে করতে দৌড়াতে থাকলে স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে। ইতিমধ্যে অবস্থা বেগতিক দেখে সুকৌশলে অপরাধীরা পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায় আমার সংগ্রহকৃত নাম্বারটিতে যোগাযোগ করলে আক্তার নামের এক ব্যাক্তি আমাকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠান। আমি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। যাতে আমার মতো কোন মেয়েকে এ ধরনের ভয়ানক পরিস্থিতির সম্মূখীন হতে না হয়।

এ বিষয়ে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলী থানার এস.আই সাহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন- মামলা দায়েরের কয়েক দিনের মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করে চার জন আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরন করলে তারা এখন জামিনে রয়েছে। মামলাটির মূল আসামী দূর্ধষ মুন্নাকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যহত রয়েছে। আশাকরি খুবই তাড়াতাড়ি মুন্নাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে স্বক্ষম হবে পুলিশ।

Tag :

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

লেখক তথ্য সম্পর্কে

Meraj Gazi

জনপ্রিয় পোস্ট

রামকান্তুপুর ইউয়িনের মোহনশাহ’র বটতলার গোল চত্বর এর উদ্বোধন

রাজধানীর মিরপুরের স্কুল ছাত্রী শান্তা অপহরণ ও পাচার মামলার মূল আসামী দূর্ধর্ষ মুন্নাকে ধরতে মরিয়া পুলিশ

আপডেটের সময় : ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জানুয়ারী ২০১৭

রাজু আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক, রাজবাড়ী টুডে:

রাজধানীর মিরপুরের ৭ম শ্রেনীর স্কুল ছাত্রী শান্তা (১৪) অপহরন ও পাচার মামলার মূল আসামী দূধর্ষ মুন্না (২২) এখনো অধরা। চাঞ্চল্যকর এই মামলার ভুক্তভোগী উদ্ধারকৃত অসহায় শান্তার হতদরিদ্র পরিবার বিচারের আশায় স্থানীয় প্রশাসন সহ প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে আজও চোখের পানি ফেলছে।

চলতি বছরের গত ১৭ই জুন মিরপুরের শাহ আলী থানার অন্তর্গত উত্তর বিশিল এলাকার রেডিয়েন্ট মডেল হাইয়ার সেকেন্ডারী স্কুল থেকে নিখোঁজ হয় শান্তা। শুরু হয় ভুক্তভোগী অসহায় পরিবারের খোঁজা খুজি। শান্তার পরিবারের অসহায় মা ও ভাইয়েরা পাগলের মত খুঁজতে থাকে শান্তাকে।

স্থানীয় প্রভাবশালী মহলে বুকফাটা কাঁন্নার জল নিয়ে মেয়েকে ফিরে পেতে ধরনা ধরে কোন প্রতিকার না পেয়ে শাহ আলী থানা পুলিশের সহযোগীতা নেন। চিহ্নিত সন্দেহ ভাজন হিসেবে ১) মুন্না (২২) পিতাঃ মোঃ ইউসুফ আলী, ২) মোছাঃ জেসমিন (২৮) স্বামীঃ ফোরকান, ৩) মোছাঃ মুকছানা আক্তার (১৯) পিতাঃ ইউসুফ আলী, সর্ব সাং- বিজলী মহল্লা বালুর মাঠের কোনার বস্তি এলাকা, থানাঃ মোহাম্মদপুর, ঢাকা, ৪) মোঃ সাদ্দাম হোসেন (২২) পিতা মৃত বেলায়েত হোসেন, সাং- দুদাল, থানাঃ বাকেরগঞ্জ, জেলাঃ বরিশাল, ৫) নেকবার হোসেন, (অজ্ঞাত) এই পাঁচ জনকে আসামী করে অপহরনকৃত শান্তার বড় ভাই রিয়াজ বাদী হয়ে শাহ আলী থানায় একটি অপহরন মামলা দায়ের করেন। শাহ আলী থানার মামলা নং-১০। পুলিশের ব্যাপক তৎপরতায় বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক শান্তা অপহরন ও পাচারের মূল কাহিনী।

শাহ আলী থানা পুলিশ ও শান্তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শান্তাকে দেশের একটি চিহ্নিত নারী অপহরন ও পাচারকারী চক্র মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পার্শবর্তী দেশ ভারতে পাচার ও বিক্রি করে দিয়েছে। অপহরনকৃত শান্তার মায়ের আকাশ-বাতাস কাপানো কান্না ও ছোটাছুটির এক পর্যায়ে শান্তার মায়ের পূর্ব পরিচিত আকবর নামের এক ব্যাক্তি সহযোগীতার হাত বারিয়ে দেন।

এ বিষয়ে শান্তার অসহায় মা বলেন বেশ কয়েক বছর পূর্বে মিরপুরের গুদারাঘাট এলাকায় একই বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকা কালীন আকবরের সাথে পরিচয় ও পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠে এরই ফলসূতিতে জানতে পারি আকবর এর আত্বীয় স্বজন ভারতে থাকেন তাদের সহযোগীতা নিলে আমার মেয়েকে উদ্ধার করা গেলেও যেতে পারে। আমার বুকে আশার সঞ্চার হলে শান্তাকে উদ্ধারব্যয় হিসেবে আকবরের দাবীকৃত ১,৫০,০০০/- টাকা দিতে রাজি হয়ে যাই বুকের মানিক মেয়েটিকে উদ্ধারের আশায়। আমি অতিস্বত্তর বরগুনা জেলার বেতাগী থানার গ্রামের বাড়ি জমি বিক্রয় করে আকবরকে ( দেড় লক্ষ) টাকা দিলে শাহ আলী থানা পুলিশের সহযোগীতায় আমার মেয়েকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।

স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমার একটাই প্রানের দাবি-অপরাধীদের শাস্তির শেষ পরিনতি দেখে বুকের হাহাকার দূর করতে চাই। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হলে ভবিষ্যতে এই ধরনের এমন কোন নিকৃষ্ট ও দূর্ধষ নারী পাচারকারী চক্র আমার মতো কোন অসহায় মায়ের বুক খালি করে এমন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড ঘটাতে পারবে না।

এই ঘৃনিত ও চাঞ্চল্যকর মামলার ভূক্তভোগী উদ্ধারকৃত শান্তা (১৪) কান্না বিজরিত কন্ঠে তার ভারতে অবস্থানকালীন দুঃস্বপ্ন ও তার উপর ভয়ানক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলে-

আমি গত ১৭ই জুন বেলা ১২.০০ দিকে মিরপুর-১ নম্বরের রেডিয়েন্ট মডেল হায়ার সেকেন্ডারী স্কুলে কোচিং করার জন্য পৌছলে আমার সহপাঠী মামলার চার নং আসামী সাদ্দামের সাথে দেখা হয়। সাদ্দামের সাথে আরও একটি মেয়ে ছিল। সাদ্দাম আমাকে বলে শান্তা তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে। চল হাটতে হাটতে বলি। আমি সাদ্দামের সাথে হাটতে হাটতে স্কুল থেকে সামান্য দূরে পৌছালে সাদ্দাম তার ব্যাগ থেকে একটি কোকাকোলার বোতল বের করে আমাকে খেতে দিলে আমি তা নির্দ্বিধায় পান করি। কোমল পানীয় পান করার কিছুক্ষন পরপরই আমি অনুভব করি আমার মাথা বনবন করে ঘুরছে এবং চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে ইতি মধ্যে সেখানে একটি মইক্রোবাস পৌছলে সাদ্দাম ও সঙ্গীয় অজ্ঞাত পরিচয়ের মেয়েটি ধরাধরি করে আমাকে গাড়ীর ভিতর তুলে নেয় এবং আমি অচেতন হয়ে পড়ি। জ্ঞান ফেরার পর আমি দেখতে পাই একটি রুমের ভেতর শুয়ে আছি। আমার পাশে বসে একটি ছেলে ও দুটি মেয়ে আলাপচারিতায় ব্যস্ত। তাদের আলাপচারিতার এক পর্যায়ে শুনতে পাই আমি ভারতের সুরাত এলাকায় আছি ছেলেটির নাম মুন্না ও মেয়ে দুটির নাম যথাক্রমে জেসমিন ও মুকছানা। আমি আতংকে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করি আপনারা কারা? আমি কোথায়? তখন মামলার এক নং আসামী মুন্না আমাকে বেধরক মারপিট করতে করতে বলে… তুই এখন ভারতে আছিস। এটা বাংলাদেশ নয়। এখানে যাদের দেখতে পাচ্ছিস তারা যা বলে এখন থেকে তুই তাই শুনবি। না হলে কোনদিনই বাংলাদেশে মায়ের কোলে ফিরে যেতে পারবিনা। তারা প্রায় দুই মাস একই রুমে আটকে রেখে আমাকে অবর্ণনীয় নির্যাতন করে। কিছুদিন পর তারা আমাকে চাপের মুখে অন্য এলাকার একটি বিউটি পার্লারে নিয়ে যায়। পার্লারের ভিতরে থাকা একটি রুমে আমাকে বন্দি করে রাখে। সেখানে একজন মহিলা ২৪ ঘন্টা আমাকে পাহাড়া দিয়ে রাখে। কয়েকদিন পার হলে মুন্না, জেসমিন, মুকছানাসহ আকাশ নামের অচেনা একটি যুবক আসে। তখন আমি কাঁদতে কাঁদতে তাদের পায়ে লুটিয়ে পড়ি এবং আমাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করি। কিন্তু তারা আমার এই আর্তনাদের কোন তোয়াক্কা না করে নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে আকাশ মুন্নাকে দুই লক্ষ ষাট হাজার টাকা দিয়ে বলে এর বেশি দিতে পরবো না। তাদের লেনদেনে দেখে ও আলাপচারিতা শুনে বুঝতে পারি আমি দুই লক্ষ ষাট হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে গেছি এবং অঝোরে কাঁদতে থাকি ইতি মধ্যে ওরা আমাকে একা রুমে রেখে বাইরে চলে গেলে আমি তাৎক্ষনিক দেখতে পাই ওদের কেউ একজন ভুল করে তাদের ব্যবহারকৃত একটি মোবাইল ফোন ফেলে চলে গেছে আমি এক বিন্দু সময় নষ্ট না করে আমার মায়ের মোবাইল নাম্বারে ফোন করে বিস্তারিত খুলে বলি কিছুক্ষন পর ঐ মোবাইলে একটি কল আসলে আমি ভয়ে ভয়ে রিসিভ করলে অন্য প্রান্ত থেকে একজন বললো- তুমি কি শান্তা আমি যা বলি মন দিয়ে শোন। তোমার মা বাংলাদেশ থেকে আমাকে এই নম্বরটি দিয়েছে। তুমি চিন্তা করোনা আমি তোমাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। তোমার অবস্থানের ঠিকানা আমাকে বল ও আমার এই নম্বরটি সংগ্রহ করে রাখ। আমি আমার অবস্থানের ঠিকানা বলতে না পারায় তিনি আমাকে সাহস দিয়ে বললেন যে কোন উপায়ে তুমি ঠিকানাটির সম্পর্কে জেনে আমার এই নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে। আমি দ্রুততার সাথে মোবাইল ফোন নাম্বারটি মুখস্থ করে ফেলি। হঠাৎ হুড়মুড় করে মুন্না ঘরে প্রবেশ করে মোবাইলটি আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে মোবাইলের কল রেজিষ্টার চেক করে অন্যত্র আমি কথা বলেছি নিশ্চিত হয়ে বেধরক মারপিট শুরু করে। জোর পূর্বক অবস্থান পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে আমাকে নিয়ে বাইরে বের হলে কিছুদূর যাওয়ার পর লোকজন দেখে আমি চিৎকার চেঁচামেচি করতে করতে দৌড়াতে থাকলে স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে। ইতিমধ্যে অবস্থা বেগতিক দেখে সুকৌশলে অপরাধীরা পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায় আমার সংগ্রহকৃত নাম্বারটিতে যোগাযোগ করলে আক্তার নামের এক ব্যাক্তি আমাকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠান। আমি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। যাতে আমার মতো কোন মেয়েকে এ ধরনের ভয়ানক পরিস্থিতির সম্মূখীন হতে না হয়।

এ বিষয়ে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলী থানার এস.আই সাহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন- মামলা দায়েরের কয়েক দিনের মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করে চার জন আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরন করলে তারা এখন জামিনে রয়েছে। মামলাটির মূল আসামী দূর্ধষ মুন্নাকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যহত রয়েছে। আশাকরি খুবই তাড়াতাড়ি মুন্নাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে স্বক্ষম হবে পুলিশ।