রাজু আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক(ঢাকা)
রাজধানীর মিরপুরে আ: কাদের চৌধুরী (৪০) নামের দূর্ধর্ষ মানব পাচারকারী ও ভয়ানক প্রতারক চক্রের হোতাকে ৫৪টি বাংলাদেশী পাসপোর্টসহ গ্রেফতার করেছে শাহ্ আলী থানা পুলিশ।
আটককৃত আ: কাদের চৌধুরী নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লাক গ্রামের ইদ্রিস আলমের ছেলে।
আটককৃত কাদের ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ ও ভয়ংকর প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ২৬ শে নভেম্বর ডিএমপির মিরপুর বিভাগের দারুস সালাম জোনের এ/সি মোস্তফা মামুন ও শাহ্ আলী থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে শাহ্ আলী থানা পুলিশের একটি আভিযানিক দল মিরপুরের ৩ নং সেকশনের ‘জে’ ব্লকের প্লট নং-জে/৪ উদয়ন রক্তকরবী হলের ৪/এন নং ফ্ল্যাটের ভাড়া বাসা থেকে কাদেরকে আটক করে।
শাহ্ আলী থানা ও ভূক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত দূর্ধর্ষ প্রতারক আ: কাদের ও তার স্ত্রী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বিত্তবান মানুষকে পৃথিবীর বড় বড় ও উন্নত দেশগুলোতে পাঠিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমান টাকা ও পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়।
বিশেষ করে বিশ্বের বিশেষ উন্নত দেশ কানাডায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে জন প্রতি ১৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে জাল ভিসাও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আরিফ নামের একজন ভূক্তভোগী। দেশীয় চলচ্চিত্রের এক সময়ের সাড়া জাগানো অভিনেত্রী বিখ্যাত চিত্র নায়িকা শাহনূরও রয়েছেন প্রতারিতদের দলে। এই চিত্রনায়িকা স্ব-শরীরে শাহ্ আলী থানায় হাজির হয়ে এই লোমহর্ষক মানব পাচারকারী ও প্রতারক চক্রের বর্ণনা দেন।
অভিযুক্ত আ: কাদের ও তার স্ত্রীই দূর্ধর্ষ এই চক্রটির মূল হোতা। তারা স্বামী স্ত্রী দুজনই পরিবার পরিজন নিয়ে কানাডায় বসবাস করেন এবং কানাডার সিটিজেনশীপের অধিকারী।
এসকল ভূয়া, মিথ্যা কথা বলে ও বিভিন্ন কৌশলে এই দম্পতি তাদের অন্যান্য সহযোগিদের সহায়তায় দেশজুড়ে ভয়ংকর প্রতারণার জাল বিছিয়ে সম্প্রতি মানুষের বিপুল পরিমান টাকা আত্মাসৎ করে গা-ঢাকা দেয়।
এরপর শুরু হয় ভূক্তভোগীদের খোঁজাখুজি। অনেক খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে প্রতারণার শিকার এক ব্যক্তি এই দম্পতির অবস্থান মিরপুরের উপরোল্লিখিত ঠিকানায় নির্ণয় করেন। দীর্ঘদিন নজরদারীতে রেখে পরিচয় নিশ্চিত হয়েই তিনি থানা পুলিশকে জানালে গত কাল পুলিশ তাকে আটক করে আইনের আওতায় আনে।
এ বিষয়ে আ: কাদের চৌধুরীকে আসামী করে বাংলাদেশ পাসপোর্ট আইনের ১৯৭৩ সনের ১১(১) (ড) ধারা মোতাবেক মামলা লিপিবদ্ধ হলেও সচতুর ও সুকৌশলে এই ভয়ংকর প্রতারণা মামলার আসামী হওয়া থেকে রেহাই পেয়েছেন কাদেরের প্রধান সহযোগী এই দ্বিতীয় স্ত্রী। শাহ্ আলী থানার মামলা নং-১০। তাং ২৬-১১-২০১৬। শাহ্ আলী থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা মো: ফিরোজ হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত আ: কাদেরের স্ত্রীকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ঘটনাটি সম্পর্কে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি কৌশলে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যান।
এদিকে ভূক্তভোগীদের দাবী-তাদের নিকট থেকে আত্মসাৎকৃত প্রায় আড়াই কোটি টাকা এখনও কাদের চৌধুরীর এই স্ত্রীর নিকট গচ্ছিত রয়েছে। তারা তাদের নিকট থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া সহ অভিযুক্তদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেছেন।