কাজী তানভীর মাহমুদ,রাজবাড়ী টুডে ঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার।বাঙলার এই বীর সন্তানের নাম রাজবাড়ী জেলার ছোট বড়, নারী-পুরুষ সকলের কাছেই পরিচিত।অনেকে তাকে আপন করে ডাকেন জব্বার ভাই বলে।জেলার প্রত্যেকটি মানুষ তার মুখে সব সময় হাসি দেখেছেন।সদা হাস্যোজ্জল এই মানুষটি গরীব দুঃখি সবার কাছেই ভালোবাসার একজন।
জেলার শিক্ষিত সমাজের মানুষেরা তাকে ডাকেন একজন আলোকিত মানুষ বলে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি যুক্ত আছেন সমাজের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে।আর্ত মানবতার সেবায় নিয়োজিত রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি রাজবাড়ী জেলা ইউনিটের তিনি সভাপতি।কর্ম ও কর্মের প্রতি বিশ্বাসীদের কে সাথে নিয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন এনজিও কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা (কেকেএস)।
বীর এই কৃতি সন্তান ১৯৬৬ সালে গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পাস করে রাজবাড়ী সরকারী কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচ এস সি পাশ করেন।পরে রাজবাড়ী সরকারী কলেজ থেকেই ১৯৭০ সালে পাশ করেন বিএ।
ব্যাক্তি জীবনে তিনি ২ ছেলে ও ১ মেয়ের পিতা।তার স্ত্রী রাজবাড়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যারয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। বড় ছেলে ড. ফকীর শহিদুল ইসলাম।তিনি ভারতের কলকাতা রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. করে বর্তমানে ঢাকা সরকারী সঙ্গীত কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। মেয়ে শামীমা আক্তার মুনমুন, বিএ (অনার্স), এম এ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।তিনি বর্তমানে রাজবাড়ী আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। ছোট ছেলে ফকীর জাহিদুল ইসলাম রুমন।তিনি ঢাকা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স), এম এ (নাট্যতত্ব) সম্পন্ন করে বর্তমানে কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা (কেকেএস) এর সহকারী নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনায় ফকীর আব্দুল জব্বার জানান, শৈশবে তিনি ১৯৬৫ সনে গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অধিনায়ক নির্বাচিত হন।১৯৬৮ সনে রাজবাড়ী মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী সংসদের সাধারণ সম্পাদক (এঝ) নির্বাচিত হন।১৯৬৮ সনে রাজবাড়ী মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী সংসদের সাধারণ সম্পাদক (এঝ) নির্বাচিত হন।১৯৭০ সালে রাজবাড়ী মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ তাকে শতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে সহ-সভাপতি (ঠচ) নির্বাচিত করে। ১৯৭০ সালে যখন বাঙালী জাতি ৬ দফা ও ১১ দফা অধিকারের প্রশ্নে সংগ্রামে লিপ্ত, তখন তিনি গোয়ালন্দ থানা শ্রমিক লীগের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ও নেতৃত্ব দেন।১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে রাজবাড়ী জেলায় গোয়ালন্দ ঘাটে প্রতিরোধ দূর্গ তার নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয়। যুদ্ধ শেষে শহীদদের স্মরন করে শহীদ স্মৃতি উচ্চ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও শহীদ ফকির মহিউদ্দিন আনছার ক্লাব সহ অনেক সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান স্থাপিত করা হয়।১৯৭২-৭৪ সালে গোয়ালন্দ আরিচা মহাসড়ক নির্মানে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন তিনি।১৯৭৭ সালে গোয়ালন্দ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাাদক নির্বাচিত হন।১৯৭৮ সালে গোয়ালন্দ মহকুমা মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক (কমান্ডার)। ১৯৭৯ সালে গোয়ালন্দ ইদ্রিসিয়া মাদ্রাসার পরিচালক কমিটির প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক মনোনিত হন।২২-১১-৭৮ ইং তারিখে গোয়ালন্দ মহকুমার বেসরকারী শিক্ষক সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন।১৬-০৫-৮৫ ইং তারিখে গোয়ালন্দ উপজেলা বাসী বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন।১৯৮৬ সনে গোয়ালন্দ শহীদ স্মৃতি এতিমখানা ও কারিগরী শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা কমিটির আহবায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক মনোনিত হন।১৯৯২ সালে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।১৯৯৪ সালে জেলা কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন।১৯৯৭ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা কওে আসছেন।১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম – ঢাকা এর নির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
দীর্যদিন যাবৎ যমুনা টেলিভিশন,বৈশাখী টেলিভিশন, চ্যানেল আই, ইটিভি, বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) , বাংলাভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দেশের উন্নয়ন, নারী শিক্ষা, গণতন্ত্র চর্চা , ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ করা এবং সমাজ সংস্কার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি সাক্ষাতকার দিয়ে আসছেন।
শিক্ষানুরাগী এই আলোকিত মানুষটি প্রতিষ্ঠা করেছেন অনেক শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান।তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন-১৯৭২ সালে পূর্ব উজানচরে “হাবিল মন্ডল পাড়া” প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে সরকারী।১৯৭২ সালে গোয়ালন্দের ঐতিহাসিক শহীদ ফকীর মহিউদ্দিন আনছার ক্লাব এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।১৯৭২ সালে রাজবাড়ী “শেরেবাংলা গার্লস স্কুল” প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন সংসদ সদস্য ডাঃ এস এ মালেক এবং প্রধান শিক্ষক মরহুম এম এ মোমেন বাচ্চু মাষ্টারকে সার্বিক সহযোগিতা করেন।১৯৭২ সালে “গোয়ালন্দ শহীদ স্মৃতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ” এর প্রধান শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠাতা যা বর্তমানে সরকারী। ১৯৭৯ সালে “গোয়ালন্দ ইদ্রিসিয়া মাদ্রাসার” পরিচালনা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের দায়িত্বগ্রহণ করেন যা বর্তমানে এমপিওভূক্ত। ১৯৮৪ সালে সরকারের সহযোগিতায় “রাজবাড়ী জেলা রেডক্রস ইউনিট” এর নিজস্ব ভবন প্রতিষ্ঠা করেন এবং অদ্যাবধি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালনরত। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারী প্রতিষ্ঠান “কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা (কেকেএস)” প্রতিষ্ঠা করেন। এ জেলার প্রায় ১০০০ শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত, ছেলেমেয়েদের নিয়ে আত্বসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৯৮৬ সালে “গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম মহাবিদ্যালয়” এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং বর্তমানে সরকারী।১৯৮৬ সালে “গোয়ালন্দ শহীদ স্মৃতি কারিগরী এতিমখানা ও শিক্ষালয়” এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যা বর্তমানে গোয়ালন্দ আইডিয়াল হাই স্কুল নামে প্রতিষ্ঠিত, বর্তমানে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
১৯৮৯ সালে “স্বেচ্ছাসেবী বহুমূখী উন্নয়ন মহিলা সমিতি (ঝইটগঝ)” প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা।১৯৯৪ সালে দৌলতদিয়ায় “কেকেএস শিশু রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে খ্যাত। যা বর্তমানে সরকারী। ১৯৯৬ সালে দৌলতদিয়া ঘাটের ভাসমান শ্রমজীবী শিশুদের জন্য “কেকেএস শ্রমজীবী শিশু বিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠা করেন (বর্তমান সভাপতি)। ১৯৯৭ সালে ৫জন মেয়ে শিশুকে নিয়ে “কেকেএস সেফ হোম” প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে বর্তমানে পতিতা পল্লীর ৫০জন মেয়ে শিশুদের লালন পালন করা হয় এবং লেখাপড়া শেষ করে কর্মসংস্থানসহ সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় । ১৯৯৭ সালে যৌনকর্মীদের সামাজিক অভিশাপ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন “মুক্তি মহিলা সমিতি”। যার শ্লোগান হচ্ছে ঘড় গড়ৎব ঝবী ডড়ৎশ (বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন)। ১৯৯৯ সালে দৌলতদিয়ায় ঝঈঅ কর্তৃক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা করেন।
২০০৮ সালে রাজবাড়ী “শাপলা কিন্ডার গার্টেন” প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন।২০০৮ সালে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সাহিত্য সংস্কৃতি ও নাটকের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ও যুব সমাজের সামাজিক অবক্ষয় রোধকল্পে “সৌরভ” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটি পরিচালনায় আছেন ড. ফকীর শহিদুল ইসলাম সুমন, সিনিয়র টিচার, সরকারী মিউজিক কলেজ, ঢাকা।২০১০ সালে দৌলতদিয়া মোল্লাপাড়ায় “মোল্লাবাড়ী তৃণমূল প্রাথমিক শিশু বিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠা করেন (বর্তমানে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি)। ২০১০ সালে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার কর্তৃক “পুলিশ লাইন হাই স্কুল” প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন।
২০১০ সালে দৌলতদিয়ায় “মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার গার্লস স্কুল” প্রতিষ্ঠা করেন (বর্তমানে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি)। ২০১০ সালে দৌলতদিয়ায় “মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার কলেজ” প্রতিষ্ঠা করেন (বর্তমানে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি)। উদ্বোধন করেন জনাব কাজী কেরামত আলী, এমপি, রাজবাড়ী। ২০১১ সালে রাজবাড়ী জেলা রেডক্রিসেন্ট ইউনিটের বহুতল ভবন নির্মাণে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।২০১২ সালে দৌলতদিয়ায় সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল এর সহযোগিতায় “কেকেএস টেকনিক্যাল এন্ড ভোকেশনাল এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (টিভেট)” প্রতিষ্ঠা করেন। যার মাধ্যমে এলাকার অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিতদের ও পতিতালয়ের শিশুদের পতিতাবৃত্তি থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হচ্ছে।২০১২ সালের বালিয়াকান্দি উপজেলায় “কেকেএস বালিয়াকান্দি আদিবাসী শিশু বিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠা করেন।২০১৩ সালের রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নে “কেকেএস বেলগাছি আদিবাসী (নৃ-গোষ্ঠী) শিশু বিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠা করেন।২০১৬ সালে কালুখালী উপজেলায় “কেকেএস শিশু বিদ্যালয় কালুখালী ” প্রতিষ্ঠা করেন।