মো: মাহ্ফুজুর রহমান, রাজবাড়ী টুডে ডট কম:
পঙ্গু ছেলেটা লাঠি ভর করে এক পায়ে দাড়ানো, তার মা জহুরার সারা শরীরে ফোসকার মতো বড় বড় কালো গুটা। আর শ্রবণ শক্তিহীন আবু বক্কার সিদ্দিক। এই ৩জন নিয়ে একটি পরিবার। প্রতিবন্ধী পরিবার হওয়া শর্তেও নেই কোন প্রতিবন্ধী কার্ড। পায়নি কোন সরকারি অনুদান।
কখন ভিক্ষা, কখন ভুট্টার খই বিক্রি করে পরিবারের প্রতিবদ্ধী ছেলে মিনারুলের মুখে তুলে দেয় দু মুঠো ভাত। এমননি সব কথার মাঝে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলেন প্রতিবন্ধী পরিবারের সদস্যরা।
“সবাই আমারে দেইখা ঘিন্যা করে, দূর দূর করে তাড়াইয়া দেয়। কেউ আমার শরীরের এতো গোটা দেখে মুখ ঘুরাইয়া নেয়। কোন কাজ পাই না। কাজ তো দূরের কথা কেউ ভিক্ষাও দেয় না।” চোখের জল ফেলতে ফেলতে এমনই সব কথা বলেই যাচ্ছিলো গোটা রোগে আক্রান্ত জহুরা বেগম।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ২নং ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মার কড়াল গ্রাসে বসত ভিটা হারিয়েছে আয়ূব মল্লিকের ছেলে আবু বক্কার সিদ্দিক (৬০), তার স্ত্রী জহুরা বেগম (৪৯), এক মাত্র ছেলে মিনারুল (৮)। এরা সবাই প্রতিবন্ধী হলেও, কারো নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড নাই। ভিক্ষা করে তাদের সংসার চলে।
কথা হয় শ্রবণ প্রতিবন্ধী আবু বক্কারের সাথে। তিনি বলেন, জায়গা জমিন বলতে কিছুই নাই। যা ছিল সবই নদীর পেটে গেছে। অনেক ছোট বেলায় রোগাক্রান্ত হয়ে আর কানে শুনতে পাই না। বর্তমানে হার্ট সমস্যায় ভূগিতেছি। অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারি না।
বর্তমানে ২নং ফেরিঘাটে ইন্তাজ মন্ডলের বাড়ীতে ভাড়ায় থাকি। এসময় তার স্ত্রী জহুরা ও তার ৮ বছরের ছেলে মিনারুলও তার পাশে ছিল। জহুরার সারা শরীরে ফোকসার মতো বড় বড় কালো গুটা দেখা যায়। পঙ্গু ছেলেটাকে দেখা যায় লাঠি ভর করে এক পায়ে দাড়ানো।
তাদের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বছর বিশেক আগে উনার (স্ত্রী) টাইফয়েড জ্বর হয়। সাধ্য মতো চিকিৎসা করাই। জ্ববর ভালো হলেও সারা শরীরে আস্তে আস্তে গুটা সৃষ্টি হয়। পয়সার অভাবে তাকেও উন্নত চিকিৎসা করাইতে পারি নাই। কয়েক বছর আগে ওনার গর্ভে আমার এই ছেলের মিনারুলের জন্ম হয়।
ছেলেটিও জন্ম থেকে এক পা অচল। ঘটি বাটি বিক্রি করে মানুষের কাছে হাত পেতে সাহায্য নিয়ে ঢাকায় নিয়ে ওকে (ছেলে) চিকিৎসা করাই। দুই বার অপারেশন করানো হয়। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয় নাই, ওর পা টা আজও ভালো হয় নাই। একটা মেয়ে ছিল কোন মতো গরীব ঘরে বিয়া দিছি। এখন না আছে জায়গা জমিন, না আছে ঘর দোর। মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে ভিক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নাই।
তিনি আবেগে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, উপজেলার গেছিলাম একটা ভাতার কার্ডের জন্য তাও পাই নাই। তারা কয় কার্ড নাই ফুরাইয়া গেছে। সিদ্দিক হতাশা প্রকাশ করে বলেন আল্লাই জানেন কি আছে ভবিষ্যত আমাদের জীবনে। পদ্মা নদীর পেটে সবই গেল কোথায় মাথা গোজার ঠাই হবে।
এসময় মিনারুলকে বুকে জড়িয়ে ধরে মা জহুরা বেগম তার পায়ের অপারেশনের ক্ষত চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, বাবা আপনাদের কাছে একটাই চাওয়া আপনারা আমার গলিজার মানিকরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দাও। ওকে আর ভিক্ষা করতে না হয়।