কাজী তানভীর মাহমুদ রাজবাড়ী টুডে ডট কম: সারাদেশে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর ২০১৬ (বাংলা-২৭আশ্বিন থেকে ১৮ কার্তিক) পর্যন্ত ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে মা ইলিশ ধরার মহোৎসব।
বড় ইলিশ এর সাথে বাদ পড়ছে না ছোট আকারের জাটকা। এসব ইলিশ আবার আকার ভেদে ২০০-৪০০ টাকা কেজী দরে বিক্রিও হচ্ছে প্রকাশ্যেই।প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিনের আলোতেই নদীতে ইলিশ ধরছে জেলেরা।দেখার যেন কেও নেই।মাঝে মধ্যে প্রশাসনের ঝটিকা অভিযান হলেও থামছে মা ইলিশ ধরার অবৈধ্য কার্যক্রম।
তবে সরকারী ভাবে এই সময়ে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত কোন প্রকারের সহায়তা পাননি বলে দাবি করেছে জেলেরা।মৎস অধিদপ্তরের উদাসীনতাকেই দায়ী করছে তারা।
রাজবাড়ী জেলা সদরের ধাওয়াপাড়া থেকে অন্তর মোড় নদী তীরবর্তি প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় নদীতে কারেন্ট জাল দিয়ে ইলিশ ধরছে জেলেরা।জেলা সদরের মত এই অবস্থা অনান্য উপজেলাতেও। জেলেরা মরিয়া হয়ে উঠেছে ইলিশ শিকারে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের ঝটিকা অভিযানে জেলেরা ইলিশসহ আটক হলেও বন্ধ হয়নি নদীতে মা ইলিশ শিকার।
জেলেরা বলছেন, সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কোন প্রকারের সাহায্য সহযোগীতা না পাওয়ায় এক প্রকার তারা বাধ্য হয়েই ইলিশ শিকার করছে। সদরের মিজানপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মৎস শিকারী (জেলে) জলিল সেখ বলেন,‘সরকার এখন মাছ মারতে নিষেধ করছে ভালো কথা।কিন্তু মাছ না ধরলে খাকো কি? কোন সরকারী সহযোগীতা তো পাইনা আমরা’।
জেলে মুসা সেখ বলেন,‘আমরা খুব কষ্টে আছি।জাল বাইতে পারিনা। প্রশাসনের লোকেরা আমাদের কে হয়রানি করে’।
মৎসজীবি মোঃ ফারুখ সরদার জানান,‘সরকারিভাবে আমাদের কে চাল দেওয়ার কথা। আমরা জেলেরা কোন চাল পাইনি’।
সদরের মিজানপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আকবর হোসেন জানান,তাদের এলাকার কোন জেলে সরকারিভাবে কোন সহায্য সহযোগীতা পেয়েছে কিনা তা তার জানা নেই। তবে গোপনে কিছু অসাধু জেলে ইলিশ ধরছে।
এ ব্যাপারে মৎস অধিদপ্তর এর সদর উপজেলা সিনিয়র নির্বাহী মৎস কর্মকর্তা বিজন কুমার নন্দী এ প্রতিবেদককে জানান, রাজবাড়ী জেলা সদরের প্রায় ৩ হাজার জেলেদের তালিকা থাকলেও এখনও সরকারী কোন বরাদ্দ বা সহযোগীতার নির্দেশ পাওয়া যায়নি। নির্দেশ আসা মাত্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকারিদের ধরতে পদ্মায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।
তিনি আরও জানান, গত ১২ অক্টোবর থেকে জেলা মৎস অধিদপ্তরের অভিযানে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ মাছ শিকারের সময় সদরের মধ্যে ৭৮ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫জন কে বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ২৩জনকে আর্থিক জরিমানা প্রদান করেছে ভ্রাম্মমান আদালত। জরিমানার পরিমান ৬০ হাজার টাকা ।আটককৃতদের কাছ থেকে ১২৩ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করে সরকারী আইন অনুসারে তা এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। আর উদ্ধার করা হয়েছে ১লক্ষ ৯০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল যা আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে।
এছারাও জেলা মৎস অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে জানা গেছে জেলার সদর উপজেলা,গোয়ালন্দ,পাংশা,বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলায় পদ্মায় অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ১২৬ জনকে আসামী করে ২৭ টি মামলা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো, একদিকে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে এই সময়ে জেলেদের জন্য এখন পর্যন্ত নেই সরকারি কোন সহায়তা। তাহলে কিভাবে সংসার চলবে জেলেদের?