কাজী তানভীর মাহমুদ, বালিয়াকান্দি থেকে ফিরে: রাজবাড়ী থেকে বালিয়াকান্দি উপজেলায় পৌছানো মাত্রই সাজ সাজ রব, আর সাউন্ড বক্স্রের জোরালো গানের ছন্দে বুঝতে বাকি থাকলো না যে সেখানকার মানুষেরা আনন্দে মেতে উঠেছে দুর্গাপূজায়। প্রত্যেকটি পাড়া-মহল্লায় একই উল্লাসে মেতেছেন ছেলে বুড়ো সবাই।
তবে বালিয়াকান্দির ১৪৪টি মন্ডপের মধ্যে সবার মুখেই জামালপুরের আলোকদিয়া গ্রামের পূজার গল্প। সেখানে চলছে পূজা উপলক্ষে ২০০ দেব-দেবীর মূর্তি প্রদর্শনী। গল্প শুনতেই দেখার সাধ যেন আর বাধ মানলো না। যেই কথা সেই কাজ। রওনা হলাম বালিয়াকান্দির জামালপুরের দিকে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার নলিয়াগ্রাম রেল ষ্টেশনের পাশেই আলোচিত সেই গোবিন্দ বাড়ির পূজা। পূজা মন্ডপের হাফ কিলো দূরেই ইট বিছানো রাস্তার দুপাশে টিউব লাইট ও ঝিকমিক রং বে রংয়ের বাতিতে সাজানো হয়েছে এলাকা। রাস্তা ধরে এগুতেই বিশাল আকারের নানা রংয়ে রঙ্গিণ কাপরের তৈরী গেইট। সেখানে যেতেই চোখে পড়লো একটি বিশাল পুকুরের পানির উপরে বাঁশ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে মন্ডপ। বাইরে থেকে দেখে অনুমান করা যায় মন্ডপের উচ্চতা প্রায় ৬০ফিট হবে।
এমন ব্যাতিক্রমী আয়োজন দেখতে সেখানে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম চোখে পড়লো। ভির ঠেলে ভিতরে যাওয়াটাই একটা ধর্যের পরীক্ষা বলা যেতে পারে। প্রধান গেইট থেকে উপরে চাদোয়া টানিয়ে তাতে আবার বিভিন্ন ঝাড়বাতি ঝুলিয়ে তৈরি করা হয়েছে ভিন্ন এক পরিবেশ। মন্ডপের প্রবেশ পথে নাকে নোলক পড়া এক অবয়ব তৈরী করেছে আয়োজকেরা।
মন্ডপের প্রতিটি তলায় হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন কাহিনী অবলম্বনে প্রদর্শন করা হচ্ছে প্রায় ২০০ দেব-দেবীর মূর্তি। এছারাও চোখে পড়বে বিশাল আকৃতির শিব,কৃষ্ণ,নারায়ন,জমরাজ সহ বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি।
পূজায় আগত ভক্ত ও দর্শনার্থীদেও বিনোদনের জন্য সেখানে বসেছে মেলা। আছে মিনি সার্কাস, নাগর দোলা, উড়োজাহাজ সহ নানা আয়োজন। আছে খাবারের হোটেল।
বালিয়াকান্দি উপজেলা গ্রাম জামালপুর দুর্গাপূজার প্রধান আয়োজক গোবিন্দ চন্দ বিশ্বাস জানালেন, প্রায় ২ যুগ ধরে তারা পূজার আয়োজন করে আসছেন। তবে পুকুরের উপরে প্রদর্শনীটি চলছে গত ৭-৮ বছর ধরে। প্রায় ৮হাজার বাঁশ কাঠ লোহা দিয়ে তৈরী করা হয়েছে ভিন্যধর্মি এই মন্ডপ। যা প্রায় ৫তলা ভবনের উচ্চতার সমান। মন্ডপের ৩য় তলায় তৈরী করা হয়েছে নরকের রূপ। যেখানে দর্শনার্থীরা নরকের কল্পিত বিভিন্ন শাস্তির নমুনা দেখতে পারবেন। আর ৪র্থ তলায় আয়োজকেরা তৈরী করেছে স্বর্গের শান্তির কল্পিত রূপ। আলোকদিয়া গ্রাম জামালপুর পূজা উদযাপন কমিটি জানিয়েছে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের জন্য এ প্রদর্শনী চলবে দেবী বিসর্জনের পরেও লক্ষী পূজা পর্যন্ত।
প্রায় দুই যুগ ধরে আয়োজিত বালিয়াকান্দির এই ব্যতিক্রমী দুর্গাপূজার মায়ের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেন ভক্তরা। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন সকল ধর্মের মানুষ।
২০০দেব-দেবীর ব্যতিক্রম এই পূজা দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার দেবী ভক্ত ও দর্শনার্থীরা উপস্থিত হচ্ছেন গ্রাম জামালপুরে।
তবে বিপুল পরিমান মানুষের এই সমাগমের মধ্যে যাতে কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে উপজেলা প্রশাসন।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম রাকিব হায়দার জানান ,ব্যাতিক্রমী এই পূজায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটছে। তাদের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার, মহিলা আনসার, সেচ্ছাসেবক টিম নিরাপত্তায় কাজ করছে। এবারই প্রথম সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে সম্পূর্ন পূজা মন্ডপ।
‘দুর্গা দুর্গতিনাশিনী-দশভূজা দেবী দুর্গা এবার এসেছেন ঘটকে আর বিদায় ও নেবেন ঘটকে।মায়ের আগমনে ঘুচে যাবে সকলের দুঃখ বেদনা’ এমনটিই কামনা করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।