রাজবাড়ী টুডে ডট কম: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সীমান্তে উত্তেজনার জেরে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে টানাপড়েনের বিষয়ে বলেছেন, এই দুদেশের মধ্যে কোনো সংঘাত হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব সবচেয়ে বেশি। এটি কাম্য নয়। এই অঞ্চলে শান্তি বজায় থাকুক এটিই আমরা চাই। পাকিস্তানে সার্ক সম্মেলন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সংস্থাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে আমাদের একলা কিছু বলার নেই। সার্কের আরো ৭ সদস্য দেশ আছে, সবাই মিলে যে সিদ্ধান্ত নেবে তা-ই হবে।
তিনি নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির সমালোচনা প্রসঙ্গে বলেন, তারা এমন নির্বাচন কমিশন চায়, যারা ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করবে। অথচ তাদের ক্ষমতাকালে ভোটাধিকার ছিল না। বরং মিরপুর, মাগুরায় ভুয়া ভোটাররা ভোট দিয়েছে। দেশবাসী ভুলে যায়নি। তার দলের আসন্ন সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হলে এবং এর ফলে তিনি সভাপতির পদ থেকে অবসরের সুযোগ পেলে সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন।
প্রধানমন্ত্রী রোববার বিকালে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন। ১৭ দিনব্যাপী যুক্তরাজ্য, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রী তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলটির সংস্কার বা নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই সব হবে। আমার তো ৩৫ বছর হয়ে গেছে। আমাকে যদি রিটায়ার করার সুযোগ দেয়, তাহলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হব। তবে অবশ্যই আমি থাকব। দল ছেড়ে তো আমি যাচ্ছি না। যদি নতুন নেতা নির্বাচিত করা হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হব।
কানাডায় গ্লোবাল ফান্ড সম্মেলন এবং যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘ ব্যস্ত সফরের পর ৩০ সেপ্টেম্বর বিকালে দেশে ফেরেন তিনি।
এ সফরে প্রধানমন্ত্রী কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। একইসঙ্গে ভূষিত হন ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ খেতাবে। এ সফরের ফাঁকে ৫ দিন ছুটি কাটিয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত ৩৫ বছরে এই প্রথম ব্যক্তিগত ছুটিতে টানা পাঁচ দিন কাটালাম।
সফরে গিয়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার পর পাঁচ দিন ওয়াশিংটনে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বাসায় কাটান প্রধানমন্ত্রী। এই সময়টিকেই তিনি তার ব্যক্তিগত ছুটির সময় বলে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার কাটানো অবসর প্রসঙ্গে বলেন, এই সময় যদিও আমি ৫১টি ফাইল স্বাক্ষর করেছি, কিন্তু তাতেও সময়টিকে আমি আমার ছুটি হিসেবেই ধরতে চাই।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রথম দফায়, ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় এবং ২০১৪ থেকে এখন পর্যন্ত তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার কানাডা সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, কানাডায় গ্লোবাল ফান্ড সম্মেলনের ফাঁকে জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করি। বৈঠকে ট্রুডো দুদেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুসংহত করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানেরও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। তিনি এ নিয়ে সে দেশের আইনি বাধার কথা উল্লেখ করেন। তবে ন্যায়বিচার নিশ্চিতপূর্বক কীভাবে স্পর্শকাতর ইস্যুটির সুরাহা করা যায়, তার উপায় খুঁজতে দুদেশের উপযুক্ত প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা শুরুর পক্ষে মত দেন। তিনি জানান, তিনি জাস্টিন ট্রুডোকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং ট্রুডো তা সানন্দে গ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতা দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিবারের মতো এবারো আমি বাংলায় বক্তব্য দেই। বক্তৃতায় অভিবাসী ও শরণার্থী ইস্যুটিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অনুরোধ করি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমি সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের পরামর্শদাতা, মূল পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষক, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী এবং প্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই। বক্তৃতায় শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বজুড়ে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আগত শরণার্থীদের সমস্যা সমাধানের কথা তুলে ধরেছি জাতিসংঘে। এ বিষয়ে আমরা একটি সমাধান চাই বলেও জানিয়েছি তাদের।
বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সজীব ওয়াজেদ জয় ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়া প্রধানমন্ত্রী তার গর্বের কথা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার এই ছেলে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জন্মগ্রহণ করে। তখন আমাদের বড় দুঃখের সময়। একটি একতলা বাড়িতে আমাদের বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তারই একটি দিনে ওর জন্ম। তারপর আল্লাহ তাকে এতো বড় করেছে। বাংলাদেশকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে নিতে পারছে, এটাই অনেক বড় কথা।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করায় মা হিসেবে এটি আমার জন্য অনেক গর্বের। জয় তথ্য ও প্রযুক্তি উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় তার বিশেষ অবদান রয়েছে। বাংলাদেশ যে এতো দ্রুত ডিজিটাল হতে পেরেছে এ জন্য তার অবদান অনেক।’
প্রধানমন্ত্রী সীমান্তে উত্তেজনার জেরে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে টানাপড়েনের বিষয়ে বলেন, ‘এই দুদেশের মধ্যে কোনো সংঘাত হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব সবচেয়ে বেশি। এটি কাম্য নয়। এই অঞ্চলে শান্তি বজায় থাকুক এটিই আমরা চাই। পাকিস্তানে সার্ক সম্মেলন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সংস্থাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে আমাদের একলা কিছু বলার নেই। সার্কের আরো ৭ সদস্য দেশ আছে, সবাই মিলে যে সিদ্ধান্ত নেবে তা-ই হবে।’
যুদ্ধাপরাধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পাকিস্তানের নাক গলানো প্রসঙ্গে আরেকটি প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, একটি দেশের সঙ্গে একটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকে। পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও থাকবে, আবার ঝগড়াঝাটিও হবে।
তিনি নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির সমালোচনা প্রসঙ্গে বলেন, তারা এমন নির্বাচন কমিশন চায়, যারা ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করবে। অথচ তাদের ক্ষমতাকালে ভোটাধিকার ছিল না। বরং মিরপুর, মাগুরায় ভুয়া ভোটাররা ভোট দিয়েছে। দেশবাসী ভুলে যায়নি।