মো: মাহ্ফুজুর রহমান,(রাজবাড়ী টুডে ডট কম):
প্রতি বছরের মত বর্ষা শুরুর সাথে সাথে খাল-বিল, নদী-নালায় মাছ ধরার ধুম পড়ে যায়। মৌসুমের শুরু থেকেই গোয়ালন্দ উপজেলাধীন পদ্মা নদীর তীরবর্তি এলাকার খাল-বিল, নদী-নালা পানিতে ভরে গেছে। এতে করে নানা প্রজাতির দেশী মাছের আনাগোনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে । পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে কৈ, শিং, মাগুর, বাইলা, চিংড়ি সহ দেশীয় মিঠা পানির মাছের বিচরণ বাড়তে থাকে।
এসব মাছ শিকারের জন্য গ্রামাঞ্চলের মানুষের আদি উপকরন বাঁশের তৈরি মাছ ধরার বিশেষ ফাঁদ চাঁই। যা দোয়ারী নামেও পরিচয় লাভ করেছে স্থানীয়দের কাছে। যার ব্যবহার এখন বর্তমান। দেশীয় মাছ ধরার মরণ ফাঁদ বাঁশের তৈরি এ চাঁই(দোয়ারী)।
বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে গোয়ালন্দ রেল ষ্টেশন এলাকায় চাঁই (দোয়ারী)’র হাট জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রতি সপ্তাহের শনি ও বুধবার হাটের ২ দিন এখানকার চাঁই (দোয়ারী) কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে বহু ক্রেতা ভিড় জমাচ্ছেন। স্থানীয়রা ছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে মাছ শিকারী ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা এখানে চাঁই কিনতে আসেন।
দেখা গেছে, বর্ষা শুরু থেকে গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল ও নদী-নালায় চাঁই দিয়ে মাছ ধরার ধুম পড়ে যায়। যা চলতে থাকে আশ্বিন-কার্ত্তিক মাস পযর্ন্ত। গোয়ালন্দ বাজারে এলাকায় সপ্তাহের শনি ও বুধবার এ হাট বসে। রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় প্রতি শনি ও বুধবার সাপ্তাহিক হাটের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চাঁই বেচা-কেনার ধুম চোখে পড়ার মতো। প্রতি একশ চাইয়ের দাম ৫/৬ হাজার টাকা। এখান থেকে পাইকারি দরে চাঁই কিনে নিয়ে ব্যবসায়ীরা গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন ছোট হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকেন। চাঁই বিক্রেতারা-ক্রেতার অপেক্ষায় নানা রকমের চাঁই সাজিয়ে বসে থাকেন। এ উপজেলার চাঁই মজবুত ও টেকসই বিধায় রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ জেলা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চেলে এই দোয়ারী বিক্রয় হয়।
গোয়ালন্দ উপজেলায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে চাঁই শিল্পের প্রসার। উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মৈজদ্দিন মন্ডল পাড়া, মাখন বাবুর চর ও পাশ^বর্তী ডিগ্রীচর চাঁনপুর এলাকা দোয়ারী পট্টি নাম ধারণ করে আছে । তাই মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চাঁই তৈরির কারিগরদের চোখে যেন ঘুম নেই। দিন-রাত পরিশ্রম করে তারা তৈরি করে যাচ্ছে এ শিল্প সামগ্রী। বাঁশ কেনা, বাঁশ কাটা আর রাত-দিন কাজ করে চাঁই তৈরি করে বিভিন্ন জেলায় রফতানি করাই এ শিল্প কর্মীদের পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ উপজেলায় প্রায় ১শতাধিক পরিবার চাঁই বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
ডিগ্রীচর চাঁনপুর এলাকার চাঁই তৈরির কারিগর মোঃ হারেজ জানান, বড় একটি বাঁশ দিয়ে ১০টি বেকি চাঁই তৈরি করা যায়। চাঁই তৈরিতে দরকার হয় পাকা বাশ দিয়ে তৈরি কাঠি, বেত ও প্লাস্টিকের সুতা । তিনি আরো বলেন, একজন লোক প্রতিদিন ৮টি ছোট মাপের দোয়ারী তৈরী করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের দোয়রীর মাঝে চাঁইয়া, তালাই ও বাধের দোয়ারীর চাহিদা বেশী। সাধারনত বর্ষা আসার আগের সময়টাতে এই ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠে।
শৌখিন মৎস্য শিকারী মেহেদুল হাসান আক্কাছ জানান, চারপাশে বর্ষার পানি থৈ থৈ করছে। দেশীয় প্রজাতির পুঁটি, কই, শিং মাছ আনাগোনা শুরুু হয়েছে। এ মাছ ধরার সবচেয়ে সহজ কার্যকর উপকরণ হচ্ছে বাঁশের চাঁই সহ ছোট খালে বুচনা জাল পেতে মাছের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা থাকে গ্রামের মানুষের।
বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ক্রেতারা জানান, অনেক আগে থেকেই গোয়ালন্দ হাটে ভালো মানের চাঁই(দোয়ারী) পাওয়া যায়। তাই একটু দূর থেকে হলেও এখানে চাঁই কিনতে আসি। আষাঢ় মাসের শেষের দিক চাঁই(দোয়ারী)’র চাহিদা বাড়তে থাকে। তাই এ সময় চাঁই বেচা-কেনার ধুম পড়ে হাট-বাজারে। এতে করে ব্যস্ত সময় পার করেন চাই প্রস্তুতকারী, বেপারী, খুচরা ও পাইকারী ক্রেতা-বিক্রেতারা।
গোয়ালন্দ উপজেলার রেলওয়ে ষ্টেশন সংলঘœ হাটে চাঁই বিক্রেতারা-ক্রেতার অপেক্ষায় নানা রকমের চাঁই সাজিয়ে বসে থাকেন। এ উপজেলার চাঁই মজবুত ও টেকসই বিধায় রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ জেলা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চেলে এই দোয়ারী বিক্রয় হয়। অল্প পূঁজি ও হাতের কারিগরির মাধ্যমে এই পেশায় আয়ও ভালই। উপজেলার বেশীর ভাগ মানুষই বছরের এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দোয়ারী তৈরীতে। এ কাজে পুরুষদের পাশাপাশি সমান তালে কাজ করেন বাড়ির মহিলারাও।