মাহফুজুর রহমান(রাজবাড়ী টুডে):গত দেড় মাস আগে পদ্মার করাল গ্রাসে সৃষ্ট হওয়া দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট পারাপার সংকট চরম আকার ধরণ করেছে। নাম মাত্র ৪টি ঘাট চালুর দাবী করা হলেও কার্যত এর সুফল মিলছে না। দৌলতদিয়ার ৪টি ঘাটের ৩নম্বর ফেরি ঘাটটি সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় ৫/৬ ঘন্টা বন্ধ থাকে। পল্টনের নিচে মাটি সরে যাওয়া এবং তীরবর্তি এলাকায় নতুন করে ভাঙ্গণ হওয়ায় এ দূর্ভোগের শিকার হন ঈদে বাড়ী ফেরা যাত্রীরা। নদীতে প্রচন্ড ¯্রােতের কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে ২ নম্বর ফেরি ঘাটটিও। নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া ২ ও ৩ নম্বর ঘাট সচল করার জন্য কার করে যাচ্ছে বিআইডব্লিটিএ। পদ্মার প্রবল ¯্রােতে একই সাথে বেশী সময় ৪টি ঘাট ব্যবহার করে ফেরিতে গাড়ী লোড আনলোড করা সম্ভব হচ্ছে না। দুই/এক দিন পর পর পল্টুন সড়া নাড়া করতে হচ্ছে। আর বাস-ট্রাকের লম্বা লাইন হয়ে দাড়িয়েছে নিত্যদিনের ঘটনা। এমনটিই চোখে পড়ে দৌলতদিয়া ঘাট পরিদর্শন করে দেখা যায়।
গত বৃহস্পতিবার সরকারী অফিস-আদালত ছুটি হওয়ায় পবিত্র ঈদুল আযহায় রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের চাপে গাড়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পবিত্র ঈদ-উল-আযাহা উপলক্ষে রাজধানীতে কোরবানীর গরুর ট্রাকের চাপতো আছেই। সব মিলিয়ে এ রুটে কোরবানীর গরুর গাড়ী, যাত্রী পারপারের পরিবহনের চাপ বাড়লেও, কমেছে ফেরি ট্রিপ। তাছাড়া ঘাট চালু থাকলেও স্্েরাতের বেগের সাথে ফেরির দুর্বল ইঞ্জিন কুলিয়ে উঠতে পারছে না। নদী পার হয়ে পল্টুনে ফেরি ভিড়তে ২/৩ঘন্টা সময় বেশী লাগে। এতে ফেরির ট্রিপ কমে গেছে। ফেরির সিরিয়াল না পেয়ে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাটে গরু ট্রাক থেকে নামিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা নদীর অত্যাধিক ¯্রােত উপেক্ষা করে রাজধানী ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে ট্রলারে পাড় করে কোরবানীর গরু। এভাবে গরু পার কারায়, গত মাসের ২৮ আগষ্ট গরুর ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনায় প্রায় ১০/১৫ গরু মারা যায়।
শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট জিরো পয়েন্ট (০) থেকে গোয়ালন্দ উপজেলা রেলগেট পেরিয়ে জমিদার ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ১০কিঃমিঃ বাস-ট্রাকের লম্বা লাইন দেখা যায়। কারো পোষ মাস, কারো সর্বনাশ কথাটি আবার মনে পড়ে গেলো। দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার (০) জিরো পয়েন্ট থেকে গোয়ালন্দ জামতলা বাজার পর্যন্ত বাসে ৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হতো। সেখানে ৫/১০ টাকার ভাড়া বাড়িয়ে ১০০ টাকায় দাড় করিয়েছে বাস কর্তৃপক্ষ।
নদীর প্রবল স্্েরাত, ফেরির ইঞ্জিন দুর্বল, নদী ভাঙনে দৌলতদিয়ায় ফেরি পারাপার স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। দৌলতদিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষের এসব দাবীর সত্যতা থাকা সত্বেও অভিজ্ঞ মহল ও এ রুটের যাত্রীরা তা মানতে নারাজ। তারা বলছেন, শুধু রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির ছাড়া ঘাট সংশ্লিষ্ট সবাই চায়, ঘাটে যানজট লেগে থাকুক। আর এ সুযোগে তারা অবৈধ টাকা কামাবে। ঘাট কর্তৃপক্ষ সরকারের উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে ঈদের আগে নদী পারাপার স্বাভাবিক রাখতে পারত। যেখানে গরুর ট্রলারের ইঞ্জিন নদীর ¯্রােত ডিঙ্গিয়ে গরু পার করতে পারে। লঞ্চে যাত্রী পার হয়। নদী ভাঙনে ট্রলারঘাট, লঞ্চ ঘাটের সমস্যা হয় না। আর ফেরির ইঞ্জিন দুর্বল, পল্টন ¯্রােতে ভেসে যায়। এসব খোড়া যুক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। আসলে কর্তৃপক্ষের দৌলতদিয়া ঘাট পরাপারে সৎ ইচ্ছা নাই।
নদী পার হয়ে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট থেকে রিক্সায় ও পায়ে হেটে যাত্রীদের গোয়ালন্দ উপজেলা কমপ্লেক্স মাঠ এসে গাড়ীতে উঠতে দেখা যায়। এসময় কমপ্লেক্স এর সামনে থেকে সাতক্ষীরা গামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের যাত্রী অনিক রহমান ও মিরাজুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, গতকাল রাত ৯টায় ঢাকা থেকে রওনা করে ভোর সাড়ে ৫টায় নদী পার হয়েছি। ৮/১০ মাইল মাহেন্দ্রতে এসে আজ (শুক্রবার) সকাল ১০টায় এখানে গাড়ী পেলাম। জানি না কখন বাড়ী ফিরব। মাহেন্দ্র ও অটোরিক্সা যোগে ঢাকা আসা গোয়ালন্দের ছোটভাকলা গামী অপর যাত্রী মিলন ও আঃ খালেক বলেন, ভোর ৪ টায় দৌলতদিয়া থেকে মাথা পিছু ১০০টাকা করে ভাড়া দিয়ে জামতলায় আসলাম। অথচ দৌলতদিয়া থেকে পৌর জামতলা বাজার পর্যন্ত বাস ভাড়া মাত্র ৫টাকা।