কাজী তানভীর মাহমুদ, রাজবাড়ী টুডে ডট কম: অহরণের ৫ দিন পার হলেও উদ্ধার হয়নি রাজবাড়ী জেলা সদরের পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের মাছ ব্যবসায়ী বাবুল মিজি (৩৩)। বাবুলের পরিবারের সদস্যদের ধারণা, নদী এলাকার চরমপন্থী বাহিনীর সন্ত্রাসীরা বাবুলকে হত্যা করে লাশ পদ্মা নদীতে ফেলে দিয়েছে।
ছেলে নিখোঁজের এই ঘটনায় বাবুলের বাবা সানাউল্লা মিজি বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চার জনকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, রাজবাড়ী জেলা সদরের আলীপুর ইউনিয়নের কোমরপাড়া গ্রামের ইউনুস গাজীর ছেলে রাজিব গাজি এবং তার মামা ও জেলা সদরের আলীপুর ইউনিয়নের আব্দুর রাজ্জাক সিকদারের ছেলে মাসুদ সিকদার, জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রামের মোজাই শেখের ছেলে মাজনু শেখ, একই উপজেলার কাউজানি গ্রামের বকশি মোল্লার ছেলে নিফাজ মোল্লা।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বাবুল মিজির জীবিত বা মৃত দেহের সন্ধান দাবি করে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে মানববনন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে বাবুলের পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসী।
অপহৃত বাবুল জেলা সদরের পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের কুটিপাঁচুরিয়া গ্রামের সানাউল্লাহ মিজির ছেলে। বাবুল মিজির পিতা সানাউল্লাহ পাঁচুরিয়া ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মা জোহরা বেগম পাঁচুরিয়া ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা।
নিখোঁজ মাছ ব্যবসায়ী বাবুলের পিতা সানাউল্লাহ মিজি বলেন, তার ছেলেকে চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধরে নিয়ে গেছে। তারা ধারণা করছেন যে সন্ত্রাসীরা বাবুলকে হত্যা করে পদ্মা নদীতে লাশ ফেলে গুম করেছে।
বাবুলের মা জোহরা বেগম এই অপহরণে সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘নদী তীরের মানুষেরা নাকি দেখেছে তারা বাবুলকে হত্যা করে ট্রলারে নিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’
বাবুলের স্ত্রী হালিমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর সন্ধান চাই। তাকে জীবিত ফিরে পেতে চাই। আমাদের তিনটি সন্তানকে এখন কীভাবে মানুষ করবো তা ভেবে পাচ্ছি না।’
পাঁচুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী আলমগীর জানান, ‘বাবুল ছেলেটি খুব শান্ত ও ভদ্র ছিল।এলাকায় গরিব দুখী মানুষের পাশে সব সময় থাকতো। এমন ছেলেকে যারা অপহরণ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।’
এদিকে বাবুলের সন্ধানে রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের সদস্যরা যৌথ ভাবে পাশ্ববর্তী পদ্মা নদী ও চরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
রাজবাড়ী থানার এসআই এনসের আলী বলেন, রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির (পিপিএম), সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল বাশার মিয়া ও গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মীর্জা আবুল কালাম আজাদসহ জেলা পুলিশের ঊর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা নিখোঁজ বাবুল মিজির বাড়ি পরিদর্শন করেছেন এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে গ্রেফতার হওয়া রাজিব গাজি থানায় সাংবাদিকদের জানান, তিনি তার এক বন্ধুর স্ত্রীর (১৮) সঙ্গে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পরেন। ওই সম্পর্কের জের ধরে গত শুক্রবার বিকালে তিনি ওই নারীকে সঙ্গে নিয়ে জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল কাটাখালী গ্রামে পূর্ব পরিচিত হাবিবের বাড়িতে ওঠেন। এর পর দিন ভোরে একদল চরমপন্থী সদস্য হাবিবের বাড়িতে আসে। তারা তাকে এবং তার বন্ধুর স্ত্রীকে জিম্মি করে। সেই সঙ্গে তারা নগদ ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণও দাবি করে।
মুক্তিপণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি তার মামা ও জেলা সদরের আলীপুর ইউনিয়নের আব্দুর রাজ্জাক সিকদারের ছেলে মাসুদ সিকদারকে (৩২) মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। তার মামা বিষয়টি ঘটনাস্থলের কাছেই বাবলু মিজির বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তাকে জানান। দুই জনকে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করতে ওই দিন সকাল ৯ টার দিকে বাবলু মিজি কাটাখালির বাড়িতে যান। তবে বাবলু মিজি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর পরই সেখানকার পরিস্থিতি পাল্টে যায়। হঠাৎ করেই গামছা দিয়ে মুখ বাঁধা অবস্থায় ১৪-১৫ জনের একদল চরমপন্থী সদস্য হাবিবের বাড়িতে আসেন। তারা অস্ত্রের মুখে বাবলু মিজিকে জিম্মি করে টেনে হেঁচড়ে মারতে মারতে পদ্মা নদীর দিকে নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে তার (রাজীব গাজী) দিকে অস্ত্র তাক করে পেছনে না তাকিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি প্রাণভয়ে দৌড়ে চলে আসলেও তার বন্ধুর স্ত্রী ও উদ্ধার করতে যাওয়া বাবলু মিজির আর কোনও সন্ধান তিনি পাননি। বিষয়টি ঘটনার পরপরই তিনি বাবলু মিজির বাড়িতে জানান।