আল-আমিন ঃ বাবা মাছ ধরে আর মা অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করে।একটি টিনের ভাঙ্গা ঘরেই পরিবারের পাঁচ জনের বসবাস।যেখানে মাথা গোজার ঠাই মেলাই ভার সেখানে আবার লেখাপড়া তো আকাশের চাঁদ হাতে পাবার মত।
তবুও অদম্য মেধা ও ইচ্ছে শক্তিকে পুজি করে দারিদ্রতার করাল গ্রাসে নিজেকে ভাসিয়ে না দিয়ে অন্যের কাছ থেকে বই সংগ্রহ আর অন্ধকার ঘরে কূপির আলো জ্বেলে লেখাপড়া চালিয়ে এবারের জে,এস,সি পরীক্ষায় সকল বিষয়ে জিপিএ গোল্ডেন ৫ পেয়েছে রাজবাড়ীর প্রিয়া (১৪)।
প্রিয়া বড় হয়ে হতে চায় একজন চিকিৎসক।গরীর অসহায় রোগীদের দিতে চায় বিনামূল্যে সেবা।দাঁড়াতে চায় নিজের পায়ে।
প্রিয়া রানী মন্ডল জেলা শহরের ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের ২০১৬ সালের জে,এস,সি পরীক্ষায় অংশ নেয়।সে পৌর এলাকার বিনোদপুর ১নং ওয়ার্ডের অতি দরিদ্র মৎসজীবী পূর্ন চন্দ্র মন্ডলের একমাত্র মেয়ে।
৩ভাই বোনের মধ্যে প্রিয়াই বড়।
ছোট্ট টিনের ছাপড়া ঘর।পরিবারের পাচ সদস্যর ছোট ঘরেই বসবাস।লেখাপড়া করার মত জায়গাটুকু মেলেনা প্রিয়ার।তবুও প্রিয়ার নিজের অদম্য ইচ্ছা আর মায়ের ভালোবাসায় পড়া লেখাটা চালিয়ে যাচ্ছে সে।
কিন্তু সামনের দিনে পড়ালেখার খরচ বহনের ব্যাপারে শংকিত হয়ে পরেছে প্রিয়ার পরিবার।
তবে প্রিয়ার প্রতিবেশীরা জানায়,প্রিয়া ছোট বেলা থেকেই অতি মেধাবী।পি,এস,সি পরীক্ষাও সে অর্জন করেছিলো জিপিএ ৫।সকলের দোয়া ও সহযোগীতা পেলে প্রিয়া একদিন নিশ্চই তার ডাক্তার হবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।ঘুচাতে পারবে দারিদ্রতার ভয়াল ছায়া।মুছিয়ে দিতে পারবে বাবা মায়ের চোখের পানি।
প্রিয়া জানায়,তিন বেলা খাবার জোটানো বাবা মায়ের পক্ষে কঠিন ব্যাপার।সেখানে তো লেখাপড়ার বিষয়টি বড় কষ্টকর।তবুও বাবা মায়ের স্বপ্ন আমাকে লেখাপড়া করানোর।বাবা মাছ ধরে আর মা মানুষের বাড়িতে রান্নার কাজ করে সংসার চালায়।খুব কষ্টে দিন কাটে আমাদের।তবুও লোখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই।বড় হয়ে একজন ডাক্তার হব এটাই আমার স্বপ্ন।গরীব দুঃখি অসহায় মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা করতে চাই।দাঁড়াতে চাই আমার নিজের পায়ে।movie A Family Man 2017
প্রিয়ার মা সরস্বতী মন্ডল জানান,তার মেয়ে ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভালো। ক্লাস ওয়ান থেকে এখন পর্যন্ত সব ক্লাশেই প্রিয়া মেধা তালিকায় প্রথম অবস্থানে থাকে।এমনও রাত গেছে কূপি জ্বালানোর মত কেরাসিন তেল নেই।রান্নার তেলে প্রদীপ জ্বেলে মেয়ে লেখাপড়া করেছে।সবার দোয়া আর সহযোগীতা পেলে প্রিয়া একদিন অনেক বড় হবে।
প্রিয়ার বাবা পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল জানান,তার মেয়ের এই সাফল্য দেখে এলাকাবাসী ও প্রিয়ার শিক্ষেরা অনেক খুশি হয়েছে।সবার দোয়া থাকলে প্রিয়া তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে।
প্রিয়ার গৃহ শিক্ষক রঞ্জণ কুমার বিশ্বাস জানায়,প্রিয়া কে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকেই পড়াচ্ছি।প্রথম দিনেই বুঝেছিলাম প্রিয়া মেধাবী।কোন বিষয়ে বুঝতে বা ধারন করতে বেশী সময় লাগে না।প্রিয়ার ধর্য্য ও মেধা বেশ ভালো।জে,এস,সিতে তার সাফল্য গোবরে পদ্মফুল ফোটার মত।প্রিয়া বিজ্ঞাণ বিভাগ নিয়ে পড়তে চায়।কিন্তু লেখাপড়ার খরচ প্রিয়ার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।সমাজের বিত্তবানেরা যদি প্রিয়াকে লেখাপড়ার ব্যাপারে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে প্রিয়া অনেক দূরে এগিয়ে যাবে।
রাজবাড়ী ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাঈদা খানম প্রিয়ার সাফল্যের ব্যাপারে জানান,প্রিয়া এবার ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জে,এস,সি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে।সে অতি দরিদ্র ঘরের সন্তান।আরো সুযোগ সুবিধা পেলে প্রিয়া অগ্রসর হতে পারবে।তার বাড়িতে বৈদ্যুতিক সংযোগ পর্যন্ত নেই।বিদ্যালয় থেকে আমরা তাকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন,এবারে জে,এস,সি পরীক্ষায় ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৭জন জিপিএ ৫ ও ৮০জন ৪ পয়েন্ট পেয়েছে।