বিশেষ প্রতিবেদক(রাজবাড়ী টুডে ডট কম):প্রতিদিন বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে যানজটের নগরীতে পরিণত হয়। বেলা ১২টার পর থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত একটানা যানজট লেগেই থাকে। মহাসড়কের দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ৮/১০ কিলোমিটার দূরে জমিদার ব্রীজ এলাকা পর্যন্ত বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসের লম্বা লাইন দেখা যায়। এই যানজটকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার নামে কর্তব্যরত পুলিশ মহাসড়কে প্রতিনিয়ত চলাচলরত অবৈধ যান মাইন্দ্রো, অটো রিক্সা-টেম্পু চালকদের কাছ থেকে ২০,৫০, ১০০ টাকা করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। অন্যথায় চালকদের মারপিট, হ্যান্ডেল, চাবি কেড়ে নেওয়া হয়।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ বাসষ্ট্যান্ড, দৌলতদিয়ার সাইন বোর্ড, জিরো পয়েন্টের বাইপাস সড়কের মাছ বাজার রোড এলাকা থেকে পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নছিমন চালক মোঃ রফিকুল ইসলাম, হাসান, কামরুল অভিযোগ করে বলে, টাকা পেলে পুলিশ ডান পাশ দিয়ে মাইন্দ্রো ঢুকতে দেয়। টাকা না দিলে মারপিট করে গাড়ির চাবি কেড়ে নেয়।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলা কমপ্লেক্স, রেলগেট, জমিদার ব্রীজ এলাকায় দূর পাল্লার বাস থেকে নেমে যাত্রীরা মহাসড়ক দিয়ে ৭/৮ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে দৌলতদিয়া ঘাটে যাচ্ছে। যাত্রীরা তাদের বহনকৃত মালামাল ও মহিলা, শিশু-বৃন্ধদের নিয়ে চরম দূর্ভোগে পড়ে। এসময় তাদেরকে ভ্যাবসা গরম ও বৃষ্টিতে ভিজে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌছাতে দেখা যায়। তাদের ২/৩ঘন্টা পায়ে হাটতে দেখা যায়। মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের জায়গা না থাকায় বিকল্প রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ছোট যান নছিমন, করিমন, অটোরিক্সা, মাইন্দ্রো চলাচল করছে পুলিশের নজর দাড়ির মধ্যে দিয়ে। ভাড়া হয়ে দাড়িয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুন। রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় থেকে দৌলতদিয়া ঘাটগামী অবৈধ যান মাইন্দ্রো, অটো রিক্সায় চালকেরা দৌলতদিয়া ঘাটে পৌছানো নামে যাত্রীপ্রতি ১০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা আর ১৫ টাকার ভাড়া ৮০ টাকায় আদায় করছে।
মাগুরা, যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাস চালকরা জানান, আগে ২৪ ঘন্টায় এ রুটে ২টি ট্রিপ দিতে পারতেন। সেখানে ১টির বেশি ট্রিপ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে তাদের আয় কমে গেছে। এসময় আশরাফুল সহ একাধিক চালক বলেন, বিগত প্রায় ২০ বৎসর যাবৎ এ রুটে গাড়ী চালাই। এতো বড় যানজট জীবনে দেখি নাই। এবারের যানজটের জন্য সম্পন্ন দৌলতদিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ দায়ী। কারণ প্রায় ২ মাস পূর্বে দৌলতদিয়া ঘাটে ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ফেরী ঘাট গুলো মেরামত করতে সক্ষম হয়নি। মেরামতের নামে লাখ লাখ টাকা খরচ করা হলেও কাজের কাজ হচ্ছে না।
কর্তব্যরত পুলিশের এস.আই রঞ্জন জানান, ঈদের আগ থেকে একটানা যানজট সামাল দিতে দিতে পেরেশান হয়ে গেছি। এখন কে কোথায় চাঁদাবাজি করছে বলতে পারবো না।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটের দৌলতদিয়ার ৪টি ফেরি ঘাট প্রায় ২ মাস অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত দৌলতদিয়ার ১ ও ৩নম্বর ফেরি ঘাট দুটি সচল দেখা যায়। এখনও বাড়তি চাপ সামাল দিতে বিকল্প কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি ঘাট কর্তৃপক্ষ । পদ্মার প্রবল ¯্রােতে একের পর এক ঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে। দৌলতদিয়া ঘাটের বিআইডব্লিটিসির কর্তৃপক্ষ আবু আব্দুল্লাহ জানান, এ নৌ-রুট দিয়ে ১৬টি ফেরি যানবাহন পারাপার করছে। ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীবাহী গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।